Header Ads

Header ADS

ট্রাম্পের আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরে কঠিন পরিস্থিতিতে রানী

Add caption
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের আমন্ত্রণে দেশটিতে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তার আসন্ন সফরে 'কঠিন পরিস্থিতির' মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। মঙ্গলবার এমন তথ্য দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের (ফরেন অফিস) সাবেক প্রধান লর্ড রিকেটস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, থেরেসা মের ওই আমন্ত্রণ তাকে 'বিস্মিত' করেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি
লর্ড রিকেটস যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত 'পার্মানেন্ট সেক্রেটারি' হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ফ্রান্সে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও কাজ করেছেন। মঙ্গলবার রিকেটস বলেন, 'হোয়াইট হাউসের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য ভ্রমণের ঘটনা হবে নজিরবিহীন।' 'দ্য টাইমস' পত্রিকায় পাঠানো এক চিঠিতে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, 'এই ব্যতিক্রমী সম্মান পাওয়ার কতটুকু যোগ্য ট্রাম্প?' এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর এই আমন্ত্রণকে রিকেটস 'অকালপক্ব' সিদ্ধান্ত হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
রিকেটস আরো বলেন, 'প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি কেমন, তা বুঝতে আরো কিছু সময় নেয়া উচিত ছিল। আরো কিছু সময় নিয়ে তারপর তাকে আমন্ত্রণ জানানোর অনুরোধ করা হলে এমন সিদ্ধান্ত আরো বুদ্ধিদীপ্ত হতে পারত। কিন্তু এখন রানী বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেন।' তিনি দাবি করেন, ট্রাম্পকে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ না জানিয়ে 'দাপ্তরিক' (অফিশিয়াল) সফরে আমন্ত্রণ জানানো যেত। উল্লেখ্য, দাপ্তরিক সফরের মাধ্যমে ট্রাম্পের আগমন শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক বৈঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যেত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় সফরকে 'বিতর্কিত' বলে মনে করেন তিনি।
রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে ব্রিটিশ রানী ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ-পরবর্তী তীব্র প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হবেন, যা তার যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের ওই রাষ্ট্রীয় সফরের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। ব্রিটিশ নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের রাষ্ট্রীয় সফরে রাষ্ট্রনেতারা বাকিংহাম প্রাসাদে রানীর আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন।
এদিকে, ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে ইতোমধ্যে তীব্র বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে ব্রিটিশ সমাজে। সফর বাতিল চেয়ে সোমবার উত্থাপন করা এক পিটিশনে ১০ লাখ ৬০ হাজার স্বাক্ষর পড়ার পর ট্রাম্পের সফরের পক্ষে নতুনভাবে আরেকটি পিটিশন উত্থাপন করা হয়েছে। তাতে শেষ খবর পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি মানুষ সমর্থন দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ৭টি দেশ থেকে মুসলমান শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে গত সপ্তাহে ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষরের পর বিভিন্ন দেশে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। এর মধ্যে বিতর্কিত ওই নেতার ব্রিটেনে রাষ্ট্রীয় সফরের খবর পাওয়ার পর লাখ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক ট্রাম্পবিরোধী সস্নোগান দিতে দিতে রাজপথে নেমে আসে। পরে বিষয়টি ব্রিটিশ সংসদে উঠলে ট্রাম্পের সফর বাতিলের ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়।
যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল সংসদ সদস্য অ্যান্ড্রু ব্রিডজেন জানান, যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়া (ব্রেক্সিট) নিয়ে খুব শিগগিরই ব্রিটিশ সংসদে তর্ক-বিতর্ক শুরু হতে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক 'স্বাভাবিক পরিস্থিতির' চেয়ে উন্নত করতে বিশেষ জোর দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, 'আগামী দুই বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি আমাদের জন্য অনেক সুবিধা বয়ে আনবে। আমরা ইইউর বাজার থেকে বেরিয়ে একক বাজারে প্রবেশ সম্পর্কে আলোচনা করতে যাচ্ছি।'
তবে ব্রিডজেন মনে করেন, 'আগামী ৯০ দিনের আগে ট্রাম্পের সফরের তারিখ নির্ধারণ করা হবে না। আর এর মধ্যে ট্রাম্পের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট ক্ষোভও প্রশমন হবে।'
আর সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হিউজেস জানান, অতীতেও অনেক 'অত্যাচারী শাসককে' আতিথেয়তা দিয়েছেন দেশটির রানী। রোমানিয়ার সাবেক নেতা নিকোলে সিউজেকু তাদের অন্যতম। সেক্ষেত্রে 'নিউইয়র্কের বিলিয়নেয়ার' ট্রাম্পের সফরেও মানিয়ে নিতে পারবেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
'টেলিগ্রাফ' পত্রিকায় এক নিবন্ধে হিউজেস আরো বলেন, 'আমাদের অধিকাংশেরই ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো উষ্ণ সম্পর্ক নেই। প্রথম ১০ দিনে তার গ্রহণ করা বিভিন্ন নীতির সঙ্গেও আমরা একমত নই। তারপরও আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সরকারের উচিত এমন অবস্থান তৈরি করা, যাতে ট্রাম্প আমাদের কথা শুনতে আগ্রহী হন এবং সব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ঘনিষ্টতম বন্ধুতে পরিণত হয়। আর এর অর্থ হচ্ছে, প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আমাদের তা বাতিল করা উচিত নয়।'
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বিরুদ্ধেও দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সাত দেশের মুসলমান অভিবাসনপ্রত্যাশীর ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এর কোনো বিরোধিতা না করায় থেরেসা মের ব্যাপক সমালোচনাও হচ্ছে। সোমবার লন্ডনের রাজপথে 'মেকে ধিক্কার' বলে সস্নোগানও দেয় অনেক বিক্ষোভকারী।

No comments

Powered by Blogger.