Header Ads

Header ADS

বাংলাদেশ কি পারবে অসম্ভবকে সম্ভব করতে ।

ভারত যে সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশকে ফলো অন করাল না, সেটির কী ব্যাখ্যা?

চতুর্থ দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে চেতেশ্বর পূজারা ‘অফিশিয়াল’ যে ব্যাখ্যা দিয়ে গেলেন, তা এ রকম—ভারতীয় বোলাররা প্রায় ১২৮ ওভার বোলিং করেছেন। আবার বোলিং করতে নামার আগে তাঁদের একটু বিশ্রাম প্রয়োজন ছিল।

‘অফিশিয়াল’ ব্যাখ্যা বলা হলো, তার মানে ‘আনঅফিশিয়াল’ ব্যাখ্যাও আছে! আছেই তো! তা একটি নয়। এর মধ্যে প্রথমটি হলো—ভারতে টেস্ট উইকেট সচরাচর যেমন হয়, উপলের (‘রাজীব গান্ধী’র নামািঙ্কত হলেও স্টেডিয়ামটিকে এলাকার নামেই চেনে স্থানীয়রা) উইকেট মোটেই তেমন ভাঙেনি। ভারত তাই দ্বিতীয় ইনিংসটা খেলে চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশকে ব্যাটিং করাতে চেয়েছে।
দ্বিতীয় যে কারণটি অনুমান করা যাচ্ছে, সেটি ভারতীয় দলের কেউ মুখ ফুটে বলবেন না। এই টেস্টে শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, তা শুরুর আগে সবার জানা হয়ে গেছে, বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। চার-পাঁচ বছর আগে হলে বিরাট কোহলি নির্ঘাত চোখ বুজে বাংলাদেশকে ফলো অন করতে বলতেন। প্রথম ইনিংসে ২৯৯ রানের লিড। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ কি ২৯৯ করতে পারবে নাকি? করলেও কতই বা বেশি করবে? একটু বেশি করলে না হয় আবার ব্যাটিংই করতে হলো!
বিরাট কোহলি যে লাঞ্চের ঠিক আগে আগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পর নিজেরাই আবার ব্যাটিং করতে নেমে পড়লেন, তাতে বছর দুয়েক আগের খুলনা টেস্টের ভূমিকা আছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। সেবার অবশ্য ফলোঅন করানো না-করানোর কোনো ব্যাপার ছিল না। বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করে করেছিল ৩৩২ রান। পাকিস্তান ৬২৮। প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রান পিিছয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ওপেনিং জুটিই করে ফেলেছিল ৩১২ রান। টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় ইনিংসে যা সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটির রেকর্ড। ওই জুটিতে ভর করে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫৫ রান করে টেস্ট ড্র করে ফেলে।
খুলনার ওই উইকেট বোলারদের এমনই বধ্যভূমি ছিল যে, ম্যাচ রেফারি মাঠের কিউরেটরকে ব্যঙ্গভরে বলেছিলেন, ‘ভালো উইকেট বানিয়েছেন। তবে একটু বেশি ভালো!’ হায়দরাবাদের উইকেট ঠিক অতটা প্রাণহীন না হলেও প্রায় সাড়ে তিন দিন প্রথাগত ভারতীয় উইকেটের চেয়ে বেমানান আচরণ করে এসেছে। ভারতীয় টেস্ট উইকেট মানেই তৃতীয় দিনে ধুলো উড়বে, মাঝেমধ্যেই একটা বল কোথায় পড়ে কোথায় যাবে, তার ঠিক থাকবে না। ঠিক সাকিবের ব্যাটিংয়ের মতো খেয়ালি আচরণ করবে। ব্যতিক্রম হয়ে এখানে তা নির্ভেজাল ব্যাটিং উইকেট।

চতুর্থ দিনে এসে অবশ্য অনুমিতভাবেই এটি একটু স্বেচ্ছাচারী আচরণ করতে শুরু করেছে। ২০০৪ সালের আগে যে বাংলাদেশ দলে কোনো বাঁহাতি স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান ছিল না, এখন সেই দলের টপ অর্ডারে বাঁহাতির ছড়াছড়ি। এই টেস্টে সব পেসারই ডানহাতি, তাঁদের ফুটমার্কে সৃষ্ট ক্ষতগুলো বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের সামনে। সেখানে বল ফেলে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ব্যাটসম্যানদের জীবন দুর্বিষহ করতে শুরু করে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের যে তিন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন, দুজনই তাঁর শিকার। অন্যজন আরেক স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার। অশ্বিনের শিকার তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক। জাদেজার সৌম্য সরকার। আউট হওয়া তিন ব্যাটসম্যানের কাউকেই সেভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না। খুব বেশি কিছু করার ছিল না তাঁদের।

সৌম্য ভুবনেশ্বর কুমারকে এক ওভারেই দুটি বাউন্ডারি মেরেছেন, দ্বিতীয়টি বাউন্সারে হুক করে। সেই ওভারেরই শেষ বলে বাউন্সারে সৌম্যর মুখে মেরেছেন ভুবি। সৌম্য অবশ্য অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে এরপরও বেশ কিছুক্ষণ উইকেটে ছিলেন। হেলমেটটা খুলে শুধু কুলি করে এক ঢোঁক পানি খেয়েছেন। সাহসিকতার পরীক্ষায় হারেননি, হেরেছেন স্কিলের পরীক্ষায়। জাদেজার টার্ন করা বলে স্লিপে রাহানের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে।

বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে ভারতের আবার ব্যাটিং করার পেছনে অবশ্য মুশফিকুর রহিমের বড় অবদান। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেছেন। সেটিও কী সেঞ্চুরি! বিরুদ্ধস্রোতে সাঁতরে অসাধারণ লড়াই আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞার স্মারক মুশফিকের ওই ১২৭। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস যে প্রায় চতুর্থ দিনের লাঞ্চ পর্যন্ত গেল, তার পুরোটাই প্রায় মুশফিকের কৃতিত্ব।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়েছে চা-বিরতির পর। বাংলাদেশকে ফলোঅন করানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু বোলারদের ক্লান্তি অথবা উইকেট আরেকটু খারাপ হওয়ার অপেক্ষা—এই দুটির কোনো এক কারণে অথবা দুটির সম্মিলিত কারণে ভারত প্রথম ইনিংসে ২৯৯ রানে এগিয়ে থাকার পরও আবার ব্যাটিং করেছে। লাঞ্চের আগে মাত্রই এক ওভার। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় সেশনে ১৫৮ রান তুলে যখন ইনিংস ঘোষণা করেছেন বিরাট কোহলি, বাংলাদেশের সামনে সমীকরণটা খুব সরল-ম্যাচ বাঁচাতে হলে চার সেশন ব্যাটিং করো। জেতার প্রশ্ন আসছে না, কারণ টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ৪১৮ রানের বেিশ করে কেউ কখনো জেতেনি। এখানে জয়ের লক্ষ্য ৪৫৯ রান।

জয়-টয় নিয়ে ভাবাটা তাই বিলাসিতা। হিসাব একটিই—চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ৩৫ ওভার, শেষ দিনের ৯০; মোট ১২৫ ওভার ব্যাটিং করতে পারলে পরাজয় এড়ানো যাবে, নইলে নয়। এত বছরে ভারতে কোনো সফরকারী দল মাত্র তিনবারই চতুর্থ ইনিংসে ১২৫ ওভার বা এর বেশি ব্যাটিং করতে পেরেছে। বাংলাদেশ অবশ্য এর চেয়ে বেশি ওভার ব্যাটিং করেও একবার ড্র করেছে টেস্ট। তবে সেটি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবং খেলাটা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। ১৪২ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশের টেস্ট ড্র করায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল নাফিস ইকবালের। তঁার ছোট ভাই তামিম ইকবালই এদিন দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম ‘দুঃখ’!

৩ উইকেট পড়ে গেছে, বাকি ৭ উইকেটে ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে শেষ দিনটা পার করে দেওয়া প্রায় অসম্ভবের নামান্তর। পারবে বাংলাদেশ? আবেগ বলে, কেন নয়? যুক্তি বলে, একটু অসম্ভব!
চতুর্থ দিন শেষে

ভারত: ৬৮৭/৬ ডি. ও ১৫৯/৪ ডি.

বাংলাদেশ: ৩৮৮ ও ১০৩/৩

No comments

Powered by Blogger.