Header Ads

Header ADS

‘পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল ইউনুস-হিলারি ক্লিনটন’

বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছিল বলে ‘ষড়যন্ত্র করেছিল ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও হিলারি ক্লিনটন’। আমাদের উন্নয়নমূলক এ কাজটা যাতে না হতে পারে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে ইউনুস পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করিয়ে দিয়েছিলেন।

তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছিল আমাদের বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ। তারা টকশো, বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে একইভাবে কণ্ঠ মিলিয়েছিল। কিন্তু কানাডার আদালতে দুর্নীতির বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এই অভিযোগে সমর্থন জানানো বুদ্ধিজীবীদের করজোরে দেশবাসীর কাছে কাছে ক্ষমা চওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

রোববার ( ১২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ইয়াসোজা গুনাসেকারার সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ পাননি কানাডার অন্টারিওর আদালত। ষড়যন্ত্রের তথ্যপ্রমাণ হিসেবে ফোনে আড়ি পেতে ধারণ করা যেসব তথ্য আদালতে উপস্থাপন করতে আবেদন করা হয়, তা নিছক গুজব বলে ১০ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাখ্যান করেছেন অন্টারিওর আদালত। তিনজনকে মামলা থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। এ দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণ বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক। ২০১৫ সালে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা। আজকে ২০১৭ চলছে। দক্ষিণাঞ্চলে কত অর্থনৈতিক উন্নতি হত, শত শত কোটি টাকা আমাদের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের জিডিপি গ্রোথ আরও কমপক্ষে ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেত।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে ইউনুস পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করিয়ে ছিলেন। পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের নামে কলঙ্কের বোঝা চাপানো হয়েছিল। যেখানে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করেছেন। এক্ষেত্রে নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. ইউনুস, আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নাম এসেছে।

এছাড়া এ মিথ্যা অপবাদের সঙ্গে কিছু টকশো বিশেষজ্ঞ সুর মিলিয়েছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুরে বলব, এদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তবে এটা সরকারে এখনো আলোচনা হয়নি। এটি তো আলোচনার বিষয়। তবে তারা যে অন্যায় কাজ করেছে এজন্য দেশের মানুষ তাদের ধিক্কার দেবে। ঘৃণা করবে। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় শাস্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যায়ের কাছে মাথানত করবেন না। যে কারণে তিনি নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করেছেন। পদ্মাসেতু নিয়ে চক্রান্তকারীরা এখন আবার বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে চক্রান্ত করছে। তবে শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। তিনি কখনও পিছু হটবেন না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সঠিকভাবে বলেছেন, তাদের (ষড়যন্ত্রকারী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। বিদ্যান লোক যারা টকশোতে যায়, যারা সমালোচনা করেছিলেন তাদের কি হবে? এদের ক্রেডিবিলিটি নেই, ক্রেডিবিলিটি নষ্ট হয়ে গেছে। এদের এখন জাতির কাছে করজোরে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা এফটিএ স্বাক্ষর করতে একমত হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। এ বিষয়ে বিভিন্ন দিক নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে। শ্রীলংকায় বাংলাদেশের কাগজ, ঔষধ ও আলু রপ্তানির বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুল্ক জটিলতা একটা বড় বাধা। আলোচনার মাধ্যমে এ জটিলতা দূর করা হচ্ছে। আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যে শুল্ক জটিলতা দূর হবে।

গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ শ্রীলংকায় ৩০.৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করা হয়েছে ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য উভয় দেশ একমত, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে শ্রীলংকায় বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মো. শফিকুল ইসলাম এবং যুগ্মসচিব (এফটিএ) মুনির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী এনবিআর চেয়ারম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এলসি (ঋণপত্র) জালিয়াতি ১৭৯ টি কন্টেনার বোঝাই পণ্য রফতানি করা হয়েছে। এসব পণ্যের টাকা দেশে ফেরত আসেনি। কারা এসব পণ্য রফতানির মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থপাচার করেছে তারও কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এর মাধ্যমে দেশের তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বিদেশে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। ব্যাংক থেকে এলসি খোলার সময় সতর্ক না হওয়ার কারণে এ অর্থ পাচার হয়েছে। এলসি খোলার সময় ব্যাংকগুলোকে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালকদের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে। অতিতে পরিচালক হয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিচালনা করেছে। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সব ক্ষেত্রে রাজনীতি করা উচিত নয়। শীর্ষ ঋণ খেলাপিদের চিহ্নিত করে খেলাপি ঋণ আদায়ের পাশাপাশি নতুন করে খেলাপি যাতে না হয় সে দিকেও নজর রাখার পরামর্শ দেন তিনি। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংকের অবস্থা খুব ভাল বলে জানান অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির।

তিনি বলেন, এটা যেমন ভাল খবর তেমনি মাত্র ৯টি গ্রুপের কাছে ব্যাংকের মোট ঋণের ৪০ শতাংশ পঞ্জিভুত রাখার খবরটি একটি খারাপ দিক নির্দেশ করে। এটা ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঝুকি তৈরি করে। এজন্য ঋণ বিতরণে প্রতিষ্ঠান ও শিল্পখাত নির্বাচন করার আগে বৈচিত্র আনতে হবে। যাতে কোন একটি শিল্পখাত বা বিশেষ শিল্প গোষ্ঠী কোন কারণে ঝুকিেেত পড়লে ব্যাংক যেন ঝুকিতে না পড়ে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্র বহুমুখী করা গেলে ঝুকিমুক্ত থাকবে ব্যাংক।

তবে নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে খেলাপি ঋণ কমে এসেছে বলে জানান জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, বর্তমান লোকশানি শাখা নেমে এসেছে ৪৮টিতে। এক বছর আগেও এ পরিমাণ ছিল ৭৪টি। ৯১০ টি শাখার মধ্যে ৭৬৪টি শাখাতে অনলাইন কার্যক্রমের অধীনে আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ জামান।

No comments

Powered by Blogger.