Header Ads

Header ADS

‘৫ বছরেও প্রতিবেদন মেলেনি, এ ব্যর্থতার দায় সরকারের’


পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও দেখা মেলেনি আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন। আর এটাকে সরকারের ব্যর্থতা বলে দাবি করেছেন নিহত সাংবাদিক সাগরের মা সালেহা মনির।

ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডিকে সালেহা মনির বলেন, ‘আমি জানি আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক দক্ষ। তারা চাইলে যেকোনো সময় হত্যাকারীকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু এই বাহিনীই সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না। আর এ জন্য সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ি করব। সরকার এর দায়ভার এড়াতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে এবং হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তিও দেয়া হয়েছে। এ বিচার দেখে আমরা আসার আলো দেখছিলাম যে, ৭ খুনের যেমন বিচার হয়েছে আমাদের সাগর-রুনি হত্যারও উপযুক্ত বিচার হবে। কিন্তু তার কিছুই হচ্ছে না।’

সালেহা মনির বলেন, ‘ঘটনার পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আজ বুঝতে পারছি, সেদিনের তার সেই কথাগুলো ছিলো সান্ত্বনার বাণী বা আইওয়াস মাত্র।’

এ ব্যাপারে সাগর-রুনি হত্যা মামলার র‌্যাব এর তদন্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পাঁচ বছর আগে ২০১২ সালের এই দিন (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয় সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে। পরদিন সকালে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের ঘোষণা দেন। ঘটনার ৫ বছর কেটে গেল। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টাতো দূরের কথা, পাঁচ বছরেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা হয়নি।

এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর সাগর-রুনির হত্যাকারীরা পার পাবে না বলে হুঙ্কার ছাড়েন। সাংবাদিকরা আন্দোলনে নামেন। অজ্ঞাত কারণে সে আন্দোলনেও ভাঁটা পড়ে। র‌্যাব আলামত সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পাঠায়। কিন্তু কোনো ফলাফল নেই ৫ বছরে। ঘটনার পর সন্দেহভাজন হিসেবে বাসার দারোয়ানসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছিল। সেই পর্যন্তই। আদালতের নির্দেশে এখন র‌্যাব মামলাটি তদন্ত করছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডটি ‘সবোর্চ্চ গুরুত্ব’ দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হলেও খুনিরা এখনও রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। উল্টো বলা যায়, অনেকটা অন্ধকারেই হাতরাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আদালত সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় মোট ১৪৬টি শুনানি হয়েছে ঢাকা মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। গত চার বছরে আদালত ৩৯টি তারিখ ধার্য করেছিলো প্রতিবেদন দেয়ার জন্য। কিন্তু কোনও তারিখেই তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি চার্জশিট দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে র‌্যাব। তাই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এমএম ইউনুস খানের আদালত আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে দিন ধার্য করেন।

ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বেঁচে আছে তাদের একমাত্র শিশুপুত্র মাহি সরওয়ার মেঘ। ঘটনার সময় মেঘের বয়স ছিল সাড়ে পাঁচ বছর। বর্তমানে সে তার নানী নুরুন নাহার মির্জার সঙ্গে থাকে। রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে মাহি সরওয়ার।
Powered by Blogger.