Header Ads

Header ADS

হতাশা নিয়েও নতুন ইসির অধীনে নির্বাচনে বিএনপি

নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছে বিএনপি। তাঁর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন আছে দলটির। কিন্তু এর মধ্যেও নতুন কমিশনের অধীনে ১৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি।
বিএনপির নেতারা বলছেন, নতুন সিইসি কী করেন তা দেখার জন্যই এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। তবে এ বিষয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যোগাযোগ করা হলে নবনিযুক্ত সিইসি কে এম নুরুল হুদা গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো হয়নি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলেছে, আগামী ৬ মার্চ ১৮টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে তিনটিতে চেয়ারম্যানসহ সব পদে এবং ১৫টি উপজেলা পরিষদের কোনোটিতে চেয়ারম্যান পদে আবার কোনোটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে।
জানা গেছে, সিলেটের ওসমানীনগর, খাগড়াছড়ির গুইমারা ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। এ ছাড়া বরিশালের বানারীপাড়া ও গৌরনদী, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কুমিল্লা সদর, পাবনার সুজানগর, কুড়িগ্রাম সদর ও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে শুধু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। নাটোরের বড়াইগ্রাম, নীলফামারীর জলঢাকা, সাতক্ষীরার কলারোয়া, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং পাবনার ঈশ্বরদী ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। মামলা, মৃত্যুসহ নানা কারণে এসব উপজেলায় বিভিন্ন পদে নির্বাচন হয়নি।
তফসিল অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ১৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এসব উপজেলায় তারা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে নির্বাচন কমিশনই হোক, আমরা তো ইলেকশন প্রসেসে (নির্বাচন প্রক্রিয়া) আছি। রকিবউদ্দীন কমিশন তো সবচেয়ে খারাপ ছিল। বর্তমান সিইসি পরিচিত আওয়ামী লীগার। কিন্তু তিনি এখনো টেস্টেড না।’
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসির অধীনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। কিন্তু স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে দলটি। আবার সংসদের উপনির্বাচনগুলো বর্জন করেছিল বিএনপি। আগামী ২২ মার্চ গাইবান্ধা-১ আসনে উপনির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগের সাংসদ মনজুরুল ইসলাম দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ায় এ আসন শূন্য হয়। এই উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর আওয়ামী লীগের সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা আসনে উপনির্বাচন হবে। জানা গেছে, গাইবান্ধার উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।
নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে এই কমিশনকে বেশ কিছু পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচন হয়েছিল।
নির্দিষ্ট মেয়াদ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মে-জুনের মধ্যে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন এবং জুন-জুলাইতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। ২০১৩ সালের ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি নির্বাচন হয়েছিল। আর রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচন হয় ওই বছরের ১৫ জুন। এর বাইরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ ইতিমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে। মামলার জটিলতার কারণে সেখানে নির্বাচন করা যাচ্ছে না।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে কে এম নুরুল হুদাকে সিইসি করে নতুন কমিশন গঠন করেন। এরপর থেকে বিএনপি সিইসিসহ নতুন কমিশনের বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর হয়। আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলটি সিইসি নুরুল হুদাকে ‘বিতর্কিত, অনভিজ্ঞ ও জনতার মঞ্চের সংগঠক’ হিসেবে অভিহিত করে।
গত রোববারও রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কাজী রকিবউদ্দীন মার্কা নির্বাচনের চেয়ে আরও খারাপ নির্বাচন করার জন্য সরকার নুরুল হুদাকে মনোনীত করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জানি, নতুন সিইসি একটি দলের সমর্থক। এরপরও আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা ক্লোজলি অবজারভ করব, দেখব, তিনি কী করেন। এ জন্যই আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনার পাশাপাশি এই কমিশনের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই কমিশনের সব সদস্যই নতুন। ফলে এই উপজেলা নির্বাচন হবে তাঁদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রথম সুযোগ। তিনি আশা করেন, সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হবে না। তাই এ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

No comments

Powered by Blogger.