Header Ads

Header ADS

রডের বদলে বাঁশ দিয়েও শাস্তি নামমাত্র

সারা দেশে সরকারি ভবন তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণকাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের ঘটনা একের পর এক ফাঁস হতে থাকায় পূর্তকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভবন ও স্থাপনাগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। স্বয়ং রাষ্ট্রপতিও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কটাক্ষমূলক মন্তব্য করেছেন। তবে এসব কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি।

গত এক বছরে এ রকম অন্তত চারটি ঘটনা উন্মোচিত হলেও শুধু একটির প্রকল্প পরিচালকসহ দুই কর্মকর্তাকে 'শাস্তিমূলক বদলি' করা হয়। আরেকটি ঘটনায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া দুটি ঘটনায় দুদকের করা মামলায় দুজন ঠিকাদার জামিনে রয়েছেন।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বদলিকে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ধরা যায় না। ছোটখাটো অপরাধের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দুর্গম কোনো স্থানে বদলির বিষয়টি প্রথা হিসেবে চালু আছে। কিন্তু বিধি অনুসারে এটা শাস্তি হিসেবে গণ্য নয়। আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এটা একটা গুরুতর অপরাধ। এসব ঘটনা প্রচুর মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে। তাই দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এই সময়ের মধ্যেই রেলের স্লিপার রক্ষায় বাঁশ ও কাঠের গুঁড়ি ব্যবহারের আরও দুটি ঘটনা উন্মোচিত হলেও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে এর পক্ষে সাফাই গেয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভবন নির্মাণ কিংবা রেল স্লিপার রক্ষায় বাঁশ কখনোই লোহার বিকল্প হতে পারে না। কেবল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিগত লাভের জন্য সাধারণ মানুষকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি তাঁরা দেখছেন নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত রূপ হিসেবে। এ অবস্থায় বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, 'বাঁশের সমস্যা হলো, এটা পানি শোষণ করে। যে কারণে এটার আয়তন বাড়ে। এ জন্য কংক্রিট ভেঙে যায়।' জামিলুর রেজা চৌধুরী আরও বলেন, 'আমি এটাকে চুরি করা বলব। মুনাফা বেশি করার জন্য বাঁশ দিয়ে দিয়েছে। এটা বাংলাদেশে বহু জায়গায় হয়ে আসছে। যাঁরা এটা তদারকি করেন, তাঁদেরও যোগসাজশ থাকতে পারে। সবাই মিলে টাকাটা হয়তো ভাগাভাগি করে নেয়। এটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।'

চুয়াডাঙ্গা দিয়ে শুরু

ইস্পাতের রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের প্রথম ঘটনাটি উন্মোচিত হয় চুয়াডাঙ্গা জেলায়। গত বছরের এপ্রিল মাসে জেলার দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন একটি ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশের চটা ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানাজানি হলে কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। পরে ওই প্রকল্প পরিচালক সাদেক ইবনে শামছসহ আরও দুই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। সাদেক ইবনে শামছকে প্রথমে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হলেও সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা সেখানে তাঁর যোগদানের বিরোধিতা করলে তাঁকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ তদারকি ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মেরিনা জেবুন্নাহার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক মণি সিং, তদারকির দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সাত্তার, প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ুব হোসেন ও অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনকে আসামি করে দামুড়হুদা থানায় একটি ফৌজদারি মামলা করেন। এ ছাড়া জয় ইন্টারন্যাশনালকে কালো তালিকাভুক্ত করে অধিদপ্তর। পরে চুয়াডাঙ্গার আমলি আদালত মামলার তদন্তভার দুদকে ন্যস্ত করেন। এ ঘটনায় মণি সিংকে গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি এখন জামিনে আছেন।

একই মাসে গাইবান্ধায় মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার (ওয়াশ ব্লক) নির্মাণকাজেও ইস্পাতের রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের খবর আসে গণমাধ্যমে। এ ঘটনায় জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফ বিল্লাহকে। পরে দুদকের করা মামলায় তিনিসহ ওই কাজের ঠিকাদার আবদুল খালেক সাময়িক কারাভোগের পর বর্তমানে জামিনে আছেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের আরেকটি ঘটনা প্রকাশ পায়। এদিন নতুন ভবনের তৃতীয় তলার লিফটের সামনের অংশের টাইলস খুলে বাঁ�

No comments

Powered by Blogger.