Header Ads

Header ADS

নির্বাচন কমিশন গঠনে ছোট দলের বেশি গুরুত্ব কারও আস্থা, কারও সন্দেহ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও ছোট দুটি দলের প্রস্তাব প্রাধান্য পাওয়ার বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। আবার কেউ বলছে, একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠন করেছেন, এতে সন্দেহের কিছু নেই।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে নতুন কমিশন নিয়ে এই মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। দলগুলো বলছে, নতুন কমিশন নিয়ে খুব একটা বিতর্ক নেই। তারা আশা করছে, এই কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। তবে কমিশন আসলে কেমন হয়েছে, তা বোঝা যাবে তাদের অধীনে কয়েকটি নির্বাচন হওয়ার পর।
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ৫টি করে নাম সুপারিশ করেছিল ২৬টি রাজনৈতিক দল। পরে অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে। সেখান থেকে ৫ জনের কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। এই ৫ জনের বেশির ভাগ নাম এসেছে ছোট দলের প্রস্তাব থেকে। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ৫ সদস্যের ৪ জনেরই নাম প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টি। এই দুটি দলই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক।
দল হিসেবে মানুষের কাছে তেমন পরিচিত নয়, তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেই, এমন ছোট দুটি দলের প্রস্তাবিত নাম প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) নতুন কমিশন গঠনে এত গুরুত্ব পাওয়ার বিষয়টিকে কিছুটা সন্দেহের চোখে দেখছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, তা ভালো ছিল। অনুসন্ধান কমিটি ভালো ছিল। কিন্তু তরীকত ফেডারেশনের তালিকা প্রাধান্য পাওয়া সন্দেহজনক। এটি ঠিক বোধগম্য নয়। যে কমিশন হলো তাদের অনেকে অপরিচিত। সিইসিকে নিয়ে কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তারপরও বিকল্পধারা রাষ্ট্রপতির ওপর আস্থা রাখে। তারা আশা করে, সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
বিকল্পধারা বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক ছোট দলগুলো মনে করে, এটি আওয়ামী লীগের কৌশল। এই কৌশলের মাধ্যমে ‘আগে থেকে ঠিক করে রাখা’ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলগুলো বিষয়টি দেখছে ভিন্নভাবে। এই জোটের শরিক জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, এই কমিশন প্রক্রিয়াগতভাবে হয়েছে। সব দলের মতামত নেওয়ার পর এই কমিশন গঠিত হয়েছে। সে জন্য তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করছেন। কোন দল থেকে কী নাম এসেছে, তা তাঁরা দেখতে চান না। তাঁরা আশা করেন, নতুন কমিশন শক্তিশালী হবে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান করবে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নতুন নির্বাচন কমিশনের ৫ সদস্যের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে ১টি করে নাম নেওয়া হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক তরীকত ফেডারেশনের ৫ জনের তালিকা থেকে ৩ জন এবং গণতন্ত্রী পার্টির ৫ জনের তালিকা থেকে ২ জনকে নেওয়া হয়েছে। একই নাম বিভিন্ন দলের তালিকায় স্থান পেয়েছে। তবে বিএনপি জোটের শরিকদের দেওয়া নাম জায়গা পায়নি।
এ বিষয়ে জাসদের অন্য অংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, দুটি দলের প্রস্তাব প্রাধান্য পেয়েছে, এটা নিশ্চিত নয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপির সুপারিশ করা নামও আছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব নাম সুপারিশ করেছে, সেখান থেকেই কমিশন হয়েছে। অর্থাৎ অনুসন্ধান কমিটি যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে, সে প্রক্রিয়ার মধ্য থেকেই কমিশন হয়েছে। বাইরে থেকে কোনো নাম সংযুক্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগ জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আওয়ামী লীগ বা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে এমন বড় দলগুলোর নাম প্রাধান্য পেয়েছে, তা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এর মধ্যেও তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, যে কমিশন হয়েছে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়নি, বড় কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। বিএনপির দিক থেকেও বড় কোনো বিতর্ক তোলা যায়নি।
তবে বিএনপি জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বলেন, দুটি দলের প্রস্তাব করা নাম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের জোটের শরিক। এটি আওয়ামী লীগের কৌশল। আওয়ামী লীগের তালিকা থেকে নামগুলো নেওয়া হলে বিতর্ক হতো, তাই তারা সহযোগীদের দিয়ে নাম দিয়েছে, এটা স্পষ্ট।
বিএনপি জোটের আরেক শরিক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদির বলেন, অনুসন্ধান কমিটি চেষ্টা করেছে। কিন্তু আগে থেকে ঠিক করে রাখা ব্যক্তিদের দিয়েই কমিশন হয়েছে বলে মনে হয়েছে।
এই দলগুলোর বাইরে গণফোরাম, বিএনএফ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও গণফ্রন্ট বলেছে, তারা আশা করে, নতুন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। কমিশন কতটুকু শক্তিশালী হয়েছে, তা বলা যাবে কমিশনের কাজ দেখে।
নতুন কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোভাবও সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এটা আওয়ামী লীগের কূটকৌশল। তারা অন্যদের দিয়ে নাম প্রস্তাব করিয়ে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে তাদের দিয়ে কমিশন গঠন করিয়ে নিয়েছে। যাতে কেউ বলতে না পারে, আওয়ামী লীগের তালিকা থেকে সিইসি নিয়োগ বা কমিশন গঠিত হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এমন অভিযোগ হাস্যকর, এর ন্যূনতম ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, কোনো দলের দেওয়া নাম বিবেচনা করে নয়, সম্পূর্ণ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দেখে তাঁদের নেওয়া হয়েছে।
Powered by Blogger.